বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৬ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::
বিজয়ের হার না মানা সেঞ্চুরিতে ঢাকার বিপক্ষে খুলনার জয় শিক্ষায় এবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দের চিন্তা সরকারের: অধ্যাপক আমিনুল ট্রাইব্যুনালে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ১৬ জনের হাজিরা ১৮ ফেব্রুয়ারি সিরিয়ায় গণকবরে প্রায় এক লাখ মরদেহের সন্ধান সচিবালয় ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা পাবেন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিকরা পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিটিঃ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লাকসামে বিজয় দিবস উপলক্ষে র‍্যালী উত্তরা প্রেসক্লাব’র পক্ষ থেকে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন সিএমএইচ থেকে গুলশানের বাসায় ফিরেছেন মির্জা ফখরুল বাংলাদেশ ও ভারতের সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের সৌজন্য সাক্ষাৎ

ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে তালাক

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০
  • ২৩১ বার পঠিত

নিউজ ডেস্ক: নারী-পুরুষের সৃষ্টিগত জৈবিক চাহিদা পূরণের বিধিসম্মত নিয়মের নাম বিয়ে। একটি বয়সে উপনীত হলে নারী-পুরুষ প্রত্যেকে একজন জীবন-পার্টনার খোঁজে। যার সঙ্গে শেয়ার করা যায় যাপিত সময়ের সুখ-দুঃখ।

বিয়ের মাধ্যমে পুরুষ নারীর প্রতি দায়বদ্ধ হয়, নারী দায়বদ্ধ হয় পুরুষের নিকট। এক্ষেত্রে দায়িত্ব সম্মান শ্রদ্ধা স্নেহ ভালোবাসা ও অধিকার—সবকিছুর সমন্বয় করে চলতে হয়। এক পক্ষীয় দায়বদ্ধতা নয়, পারস্পরিক দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যজ্ঞান দাম্পত্য সম্পর্কে স্বর্গীয় সুখ এনে দেয়।

ইসলামে যদিও বিবাহবন্ধন আজীবনের জন্য সম্পাদন করা হয়, কিন্তু এমন বাস্তবতায় বিবাহবন্ধন বিচ্ছিন্ন করারও সুযোগ রাখা হয়েছে। ইসলাম কখনোই বিবাহবন্ধন ছিন্ন করাকে উত্সাহিত করে না। বরং স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের মিল মহব্বত সৃষ্টি করা ও ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্য নানা পন্থা ও উপায় বলে দিয়েছে।

কারণ, বিবাহবন্ধন বিচ্ছিন্ন করার ফলে শুধু স্বামী-স্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তাদের সঙ্গে দুটি পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি হয় এবং সন্তানের জীবনও ধ্বংস হয়। তাই অসহযোগিতার অবস্থায় প্রথমে একে অপরকে বুঝানো তারপর ভয়ভীতি প্রদর্শনের উপদেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি এতে তারা বাধ্য হয়ে যায় তাহলে আর তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান কর না। (সুরা নিসা : ৩৪)

অবাধ্যতা দেখা দিলে তিনটি কাজ করতে বলা হয়েছে। প্রথমে সুন্দরভাবে উপদেশ দিবে। তাতে কাজ না হলে স্ত্রীর শয্যা ত্যাগ করবে। তাতেও কাজ না হলে হালকা প্রহার করবে। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে উভয় পক্ষের পরিবার থেকে বিচক্ষণ ও সহানুভূশীল কয়েক জন লোক সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা স্বামী-স্ত্রীকে বুঝানোর চেষ্টা করবে। তাদের সংশোধনের চেষ্টা করবে। আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে বলেন :যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মতো পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ সবকিছু অবহিত। (সুরা নিসা : ৩৫)

পরিবার থেকে সালিশ নিযুক্তকরণের তাত্পর্য এই যে, ঘরোয়া বিষয়টি যেন অযথা মামলা-মোকদ্দমায় না গড়ায় এবং হাটেবাজারে চর্চিত না হয়। সালিশগণ পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিবাদ মিটিয়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবে। যদি তা ব্যর্থ হয় এবং বৈবাহিক সম্পর্কের কাঙ্ক্ষিত সুফল লাভের স্থলে উভয়ে একত্রে মিলেমিশে থাকাই মস্ত আজাবে পরিণত হয় তাহলে তালাকের সিদ্ধান্ত নিবে।

ইসলামে যদিও অপারগ অবস্থায় তালাকের বিধান দিয়েছে, যেন ঝগড়া-বিবাদের তিক্ততায় স্বামী-স্ত্রীর জীবন দুর্বিষহ না হয়। কিন্তু তালাককে নিরুত্সাহিত করে। হজরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবিজি (স) বলেছেন : আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট হালাল কাজ হলো তালাক। (সুনানে আবু দাউদ : ২১৭৮)

কোরআনের কোথাও স্বামীকে, কোথায় স্ত্রীকে এমন সব উপদেশ দেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে তাদের চিন্তায় পরিবর্তন আসে এবং তারা নিজেদের দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলতে আগ্রহী হয়। স্বামীকে স্ত্রীর প্রতি সহানুভূশীল হতে আদেশ করে আল্লাহ তায়ালা বলেন : নারীদের প্রতি সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর তবে হয়তো তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছো যাতে আল্লাহ কল্যাণ রেখেছেন। (সুরা নিসা :১৯) অপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীদের পালনীয় গুণের কথা উল্লেখ করে বলেন : নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাজতযোগ্য করে দিয়েছেন লোকচক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাজত করে। (সুরা নিসা :৩৪)

তালাকের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে অধিকাংশ তালাকের দুটি প্রধান কারণ বেরিয়ে আসবে। একটি হলো—স্ত্রী স্বামীর অবাধ্যতা করে। দ্বিতীয়টি হলো—স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে সুন্দর ও আন্তরিক আচরণ করে না। সেদিক বিবেচনায় আল্লাহ তায়ালা স্ত্রীকে স্বামীর অনুগত থাকার উপদেশ দিয়েছেন এবং স্বামীকে স্ত্রীর সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপনের উপদেশ দিয়েছেন। পুরুষের মধ্যে যদি সদ্ভাব চলে আসে সে যদি স্ত্রীর মন বুঝে তার সঙ্গে ভালো আচরণ করে এবং স্ত্রীও যদি স্বামীর কথা মেনে চলে স্বামীর অবাধ্যতা না করে তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বহুলাংশে হ্রাস পাবে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বর্তমানে নারী স্বাধীনতার নামে স্ত্রীকে স্বামীর অবাধ্যতা শেখানো হয়। ফলে স্ত্রী স্বামীকে প্রতিপক্ষ ভাবে। স্বামীও স্ত্রীর মন বুঝার চেষ্টা করে না। তাকে আনন্দিত রাখার প্রয়োজন মনে করে না। উপরন্তু যারা বিবাদের মীমাংসা করার কথা তারা বিবাদ উসকে দেয়। ফলে এখন ঘরে ঘরে অশান্তির দাবানল জ্বলছে। পরিবারগুলো একেকটি জ্বলন্ত উনুনে পরিণত হয়েছে। এর থেকে উত্তরণের জন্য কোরআন প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করা কর্তব্য।

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com