বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২১ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ঝগড়া বিবাদ থেকে দূরে থাকলে যে পুরস্কার দেবেন নবীজী

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
  • ৭৯ বার পঠিত

মানুষ হিসেবে প্রত্যেকেই সর্বদা নিজেদের দোষ-ত্রুটিসমূহকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। কারণ কোনো মানুষই চায় না কোনোভাবেই তার মান-সম্মান ও মর্যাদা নষ্ট হোক। কিন্তু এমন কিছু কাজ আছে যা মানুষের সমস্ত চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে তার দোষ-ত্রুটিসমূহকে প্রকাশ করে দেয় অন্য কেউ। ফলে সে সমাজের সামনে লজ্জিত হয়। অথচ একটু চিন্তা-ভাবনা করে পথ চললে, জীবনকে পরিচালনা করলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় না।

এ জন্য দরকার, যেসব কাজ মানুষের দোষ-ত্রুটিকে প্রকাশ করে দেয়; সেগুলো থেকে দূরে থাকা। আবার অহেতুক ঝগড়া-বিবাদ মানুষের ব্যক্তিত্বকে ত্রুটিপূর্ণ করে তোলে। বহু কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ পবিত্র লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ। নবীজি (সা.) লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ জানানোর জন্য সাহাবায়ে কেরামের কাছে আসছিলেন, কিন্তু ঘর থেকে বের হয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত দুটি লোককে দেখতে পান, তখন তাঁকে সে তারিখটি ভুলিয়ে দেয়া হয়।

উবাদা ইবনুস সামিত (রা.) বলেন, একদা নবী (সা.) আমাদের লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দুজন মুসলমান ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বলেন, আমি তোমাদের লাইলাতুল কদরের সংবাদ দেয়ার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবত এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে।

তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ করো। (বুখারি, হাদিস : ২০২৩) তাই সর্বদা নিজেকে ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করা আবশ্যক। কারণ মহানবী (সা.) তাঁর উম্মতদের ঝগড়া থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। ঝগড়াকে মুনাফিকের অভ্যাস বলে আখ্যা দিয়েছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চারটি (দোষ) যার মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে সে খাঁটি মুনাফিক; আর যার মধ্যে এ দোষগুলোর একটি বর্তমান রয়েছে তা ত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকির একটি স্বভাব থেকে যায়। (১) যখন সে কথা বলে মিথ্যা বলে, (২) সে সন্ধি চুক্তি করলে তা ভঙ্গ করে, (৩) সে ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৪) সে ঝগড়া করলে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে। (মুসলিম, হাদিস : ১১৩)

এখানে ঝগড়াকালে অশ্লীল ভাষা ব্যবহারকে মুনাফিকের চরিত্র বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। আর ঝগড়াঝাঁটিতে অশ্লীল গালাগাল না করলে তো ঝগড়াই জমে না। তখন মানুষকে শয়তান প্রভাবিত করে আর তারা বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে অশ্লীল কথা বা কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না।

তা ছাড়া ঝগড়াঝাঁটি মানুষকে হিদায়াতের পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। মানুষের ঈমান ও চরিত্রকে কলুষিত করে দেয়। আবু উমামাহ (সাদি বিন আজলান) (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমার পরে হিদায়াতপ্রাপ্ত লোক তখনই পথভ্রষ্ট হবে, যখন তারা ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হবে। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) : ‘বরং এরা তো এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়।’ (সুরা : যুখরুফ, আয়াত : ৫৮)। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৮)

অর্থাৎ হিদায়াতপ্রাপ্ত লোকেরা ঝগড়ায় লিপ্ত হবে না, কিন্তু যারা হিদায়াতের পথ থেকে বিচ্যুত হবে, পথভ্রষ্ট হবে, তারাই অহেতুক ঝগড়ায় লিপ্ত হবে। তাই আমাদের উচিত ঝগড়া থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা।

এমনকি যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত বিষয়ে ঝগড়া করার ব্যাপারেও ইসলামে অনুৎসাহী করা হয়েছে। মহানবী (সা.) ঝগড়া এড়িয়ে চলা মানুষদের জন্য জান্নাতের বিশেষ উপহারের ঘোষণা দিয়েছেন।

আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার; আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে চলো। কারণ অনুমান বড় মিথ্যা ব্যাপার। আর কারো দোষ খুঁজে বেরিও না, গোয়েন্দাগিরি করও না, পরস্পরকে ধোঁকা দিয়ও না, আর পরস্পরকে হিংসা করও না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষণ করও না এবং পরস্পরের বিরুদ্ধাচরণ করও না। বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ভাই ভাই হয়ে যাও। (বুখারি, হাদিস : ৬০৬৬)

আসল শক্তিমান সেই ব্যক্তি যে ঝগড়া-বিবাদের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ঝগড়া-বিবাদের মূলে রয়েছে ক্রোধ। ক্রোধান্বিত ব্যক্তি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়ে অনেক অনাকাঙ্খিত কিছুর জন্ম দেয়। এ জন্য ক্রোধ নিয়ন্ত্রণকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বড় জিহাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com